ভালোবাসার গল্প !

আচ্ছা নূপুর একটা কথা বলি? 
.
-একটা কেনো, হাজারটা বল।
.
--আচ্ছা মনে কর তুই রাতে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলি তুই বানর হয়ে গেছিস তখন তোর কেমন লাগবে? 
.
-হোয়াট কি বলছিস এসব? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
--হুমমম ঠিকি বলছি তোর কেমন লাগবে বলতো?
.
-তারমানে তুই বলতে চাচ্ছিস আমি বানর? (রাগে)
.
--তুই মোটেও বানর না, তুই হলি আস্তো একটা চামচিকা।
.
-আমি চামচিকা? (ফুসছে)
.
--ইঁন্দুর, বিলাই, তেলাপোকা।
.
-রুবেইল্যা তুই কিন্তু মাইর খাবি।
.
--তুই শালিক, তুই পেঁচা, তুই টিকটিকি, তুই টুটটুট....তুই.....
.
আমার কথা শেষ না হতেই নূপুর হাতে থাকা বই দিয়ে পিঠে দিলো একটা বাড়ি। আমিও পালটা বারি দিয়ে দৌড়। নূপুর আমার পিছে পিছে দৌঁড়। আর বলছে..."হারামি খাড়া আজকে, তুই আমারে বানর কস, তর বউ বানর। তর পোলা তেলাপোকা, তর শ্বশুর উগান্ডা, তর দাদা টিকটিকি।" আমি পাল্টা জবাব দিচ্ছি। নূপুর আমার সাথে দৌঁড়ে পেরে উঠলনা। ধপাসস করে মাঠে বসে পরলো। আমিও থামলাম। নূপুর সমানে হাঁপাচ্ছে। মুখটা ঘেমে গেছে। আমি আস্তে আস্তে নূপুরের কাছে গেলাম, বললাম.... 
.
--কিরে ব্যাটারি ডাউন?
.
-মানে? (হাঁপাচ্ছে)
.
--আর দৌড়ানি দিলিনা যে?
.
-হারামি যাহহহ তর লগে কথা নাই...
.
--আহালে সোনা রাগ করেনা।
.
-আমায় সোনা বলবিনা তুই।
.
--কেন?
.
--এমনি। 
.
-আচ্ছা বলবনা যাহহহ।
.
দুজনেই চুপচাপ। কেউ কোন কথা বলছিনা। নূপুর অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকাতেই মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। মনে হয় রাগ করছে। আমি বললাম....
.
--নূপুর?
.
-হুমম বল।
.
--রাগ করছিস?
.
-না, আমার রাগ নেই।
.
--আচ্ছা সরি, আরেকটা কথা শোন?
.
-না চুপ কর তুই। আর কোন কথা বলবিনা।
.
--কেন, আমি কি করছি?
.
-তুই খালি আমায় বকা দেস।
.
--বকা কই দিলাম,তুই চুপচাপ ছিলি তাই একটু মজা করলাম।
.
-হইছে, আর বলা লাগবেনা। যাহহহ ভাগ....
.
--না যামুনা।
.
-তাইলে বসে বসে মুড়ি খা। 
.
--কিনা দে খাই।
.
-তুই কি ফকির তর কাছে টেকা নাই?
.
--আছেতো।
.
-তাইলে আমার কাছে টাকা চাস কেন?
.
--তুই খাইতে বললি তাই।
.
-হ কইছে তরে হুউউউ.....(ভেংচি কেটে)
.
--আচ্ছা নূপুর চল আমরা বিয়ে করে ফেলি?
.
-আচ্ছা বায়, থাক গেলাম আমি। (বসা থেকে উঠে)
.
--তুই এমন কেন?
.
-কি করছি?
.
--সারাক্ষণ কথা বললাম কিচ্ছু না, বিয়ের কথা বললাম আর চলে যাবি। প্রতিদিনই একই কথা, "আচ্ছা বায়, থাক গেলাম আমি।"
.
-তাইলে কি বলমু?
.
--জবাব দে?
.
-দিমুনা, থাক তুই গেলাম আমি।
.
--কালকে তো ভার্সিটি বন্ধ, কি করবি তুই?
.
-বাসায় বসে থাকবো।
.
--চল কোথাও ঘুরে আসি।
.
-কখন যাবি।
.
--বিকেলে যাই।
.
-ওকে।
.
--আর শোন।
.
-বল....
.
--কত আশা করে তোকে লাল পাড়ের একটা সাদা শাড়ি দিয়েছিলাম, কত বলেছি কিন্তু কখনও তো পরিসনি। কালকে একটু পরে আসিস, খুব ইচ্ছে হয় তোকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে।
.
-পারবনা। বায় বায়....
.
বলেই নূপুর চলে গেলো। আমি ঠাই বসে আছি। তিন বছরের ফ্রেন্ডশিপ আমাদের। মেয়েটাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু ও কিছুতেই বোঝেনা। বোঝেনা নাকি কি করে আল্লাই ভালো জানে। 
.
বিকেল ৩ টা। লেকের পারে বেঞ্চিতে বসে আছি। কিন্তু নূপুরের আসার কোন নামগন্ধ নেই। তবে ওর জন্য অপেক্ষা করতে বরং ভালোই লাগছে। কিছুক্ষণ পর পেছন থেকে আচমকা ডেকে উঠলো....
.
--ঐ রুবেল? (একটু জোরে)
.
যেহেতু ডাকটা পেছন থেকে দিছে তাই একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। লাফ দিয়ে পিছনে তাকালাম। আমার এমন ভাব দেখে নূপুর খিলখিল করে হেসে দিলো। আমি অবাক হলাম। নূপুরের পরনে লাল পারের সাদা শাড়ি। হালকা মেকআপ। খোপায় বেলি ফুলেরর মালা, চোখে কাজল। কিন্তু তারপরেও কিসের জানি কমতি আছে। হ্যা কপালের টিপ। আর হাতের চুড়ি। নূপুর মুচকি হেসে ধুম করে বলল....
.
--নে পরিয়ে দে...? (হাতে কাচের চুরি দিয়ে)
.
-........(অবাক হলাম)
.
--কিরে পরিয়ে দে?

-কেন চুরি তুই পরতে পারিসনা?

--আমি পরলে ভেঙ্গে যায়।
.
-কপালের টিপ কই?
.
--ওটাও আছে আগে চুড়ি পরিয়ে দে...
.
আমি নূপুরেরর হাতে চুড়ি পরিয়ে দিচ্ছি আর নূপুর মুচকি মুচকি হাসছে। আজব! এখানে হাসির কি হলো। আমি বললাম.....
.
-হাসছিস কেনো?
.
--তোর কাণ্ড দেখে।
.
-আমি কি করলাম?
.
--কিছুনা পরিয়ে দে...
.
আমি নুপরকে চুড়ি পরিয়ে দিলাম। ও বলল....
.
--টিপ কে পরিয়ে দেবে?
.
-কেন তুই পরতে পারিসনা?
.
--বাকা হয়।
.
-আয়নায় দেখে পরতি।
.
--এত কৈফিয়ত চাচ্ছিস কেন। যা বলছি তাই কর...? 
.
-রাগ করলি...?
.
--নাহহহহহ....(ঠোটের কোণে হাসি)
.
আমি নূপুরকে টিপ পরিয়ে দিলাম। ও একটু কেঁপে উঠলো। আবেশ চোখ বন্ধ করে ফেলল। তারপর মালা টা একটি ঠিক করে গুজে দিলাম। বললাম....
.
-কাজল দিয়েছিস কেন? ওটাওও নাহয় আমিই দিয়ে দিতাম।
.
--তুই কাজল দিয়ে দিলে চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে যেত।
.
-বুঝলাম না....
.
--তুই বুঝবিও না কোনদিন। 
.
-তা আজকে হঠাৎ শাড়ি পরে এলি, আর এত সাজুগুজু! কারণ কি?
.
--এমনি আসলাম, তোর সমস্যা? (মুচকি হেসে)
.
-নো সমস্যা। আমার ভালো লাগছে, ভীষণ ভালো লাগছে।
.
আমি আর নূপুর বেঞ্চে বসে আছি। দুজনেই চুপচাপ। নূপুর মিটিমিটি হাসছে। কিছু বুঝতে পারছিনা। আমি বললাম....
.
-হাসছিস যে?
.
--জানিনা।
.
-তুই খুব অদ্ভুত।
.
--কেনরে?
.
-আচ্ছা নূপুর কখনও ভেবে দেখেছিস।
.
--কি?
.
-এই যে আমাদের বর্তমান সময়টা কত সুন্দর। কত আনন্দ, কত খুনসুটি, ঝগড়া। একসাথে ফুচকা খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া, হুটহাট ক্লাস ফাঁকি দিয়ে লেকের পারে বসে থাকা। সব একদিন হারিয়ে যাবে তাইনা?
.
--তোর কিছু হইছে?
.
-নারে, আবার দেখ এইযে তোর সাথে কত সুন্দর মুহূর্ত গুলো কাটিয়েছি। এখন দুজন একসাথে বসে আছি। একটা সময় আমরা কেউ থাকবনা। তুই চলে যাবি অন্য কারো ঘরে আমিও নাহয় কোন এক অভাগিনীকে নিয়ে থাকব। তারপর আর আমাদের সেই ভার্সিটির লাইফটা থাকবেনা। একসাথে বসে থাকা, আড্ডা দেওয়া, ঘুরতে যাওয়া, ক্লাস ফাকি দেওয়া। কেউ কারো খোঁজখবর নিব না। হঠাৎ করে কোন এক সময় কারো মনে হবে রুবেল/নূপুর নামের আমার এক ফ্রেন্ড ছিল। খুব করে মনে হবে। আবার কারো ডাকে ভাবনার জগত থেকে আমরা বেরিয়ে পরব। চামড়ায় ভাজ পরে যাবে। বয়স বৃদ্ধি পাবে। চোখে থাকবে পাওয়ারি চশমা। সেই সৌন্দর্যময় দিনগুলোর কথা মনে পরবে। মিস করব সেই দিনগুলো। আবার দেখা গেলো কোন একসময় শুনতে পেলি রুবেল বহুদূর চলে গেছে। না ফেরার দেশে। যেখান থেকে চাইলেও মানুষ আর ফিরে আসতে পারেনা। তখন হয়তো একটু চোখের পানি মুছবি। হয়তো না....মনে মনে বলবি রুবেল কে? ওতো আমায় সবসময় বকতো, বরং মরে ভালোই হয়েছে। আস্ত ফাজিল একটা।
.
--..........(চোখে পানি)
.
-কাঁদছিস কেনো?
.
--তোর চোখেও তো পানি।
.
-কি জানি, এমনিতেই আসে।
.
--জানিস রুবেল আমি একজনকে খুব করে চাই।
.
-তোর ভালোবাসার মানুষকে বুঝি....?
.
--হুম....অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। ও আমাকে একদিন একটা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি দিয়েছিলো আর বলেছিল আমি যেন রোজ এই শাড়িটা পরি। আমি বলেছিলাম আর কি পরব। ও বলেছিলো কি জানিস? বলেছিলো..শাড়ি পরলেই নাকি আমার আর কিচ্ছু পরা লাগবেনা। পরে ও ছোট একটা চিরকুট দিয়েছিলো। সেখানে লেখা ছিলো..."খোপায় বেলি ফুলের মালাটা একটু অন্যরকম করে দিস, যাতে আমি ঠিক করে দিতে পারি। কখনও কপালে টিপ দিবিনা, ওটা আমি পরিয়ে দিব। চোখে নিজেই কাজল দিস, কারণ আমি কাজল দিয়ে দিলে তুই কান্না করবি, আমি চাইনা কাজল লেপ্টে যাক। আর হ্যা...আমার অনুমতি ছাড়া হাতে চুড়ি পরলে হাত ভেঙ্গে দিব।" যেদিন ঐ পাগলটা এই কথা গুলো বলেছিলো সেদিন থেকেই আমি...মাঝরাতে ঐ পাগলটার দেওয়া শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। নিজের সৌন্দর্য দেখি। কিন্তু পাগলটা আসেনা। খোপা ঠিক করে দেয়না, কপালে টিপ দিয়ে দেয়না, হাতে চুড়ি পরিয়ে দেয়না। কিন্তু আজকে যখন পাগলটা আমায় টিপ দিয়ে দিলো, খোপা ঠিক করে দিলো, হাতে চুরি পরিয়ে দিলো। আমারনা তখন সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। 
.
--সাথে পাগলটাকে নিয়ে মরিস। 
.
-জানিস আমি সব কিছু পারব কিন্তু ওকে ছাড়া থাকতে পারবনা।
.
--তাহলে বিয়ে করে ফেল।
.
-বিয়ে করবি আমায়?
.
--পাগলকে বিয়ে করতে পারবি? 
.
নূপুর কিচ্ছু বললনা। হু হু করে কেঁদে দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। কান্না কোন মতেই থামছেনা। জগতের সব কিছুই অদ্ভুত। তারচেয়ে বেশি অদ্ভুত হলো মেয়েদের মন। ওরা কেমন সেটা ওরা নিজেরাও জানেনা। এই মেয়েটা আমাকে এতটা ভালোবাসে জানা ছিলনা। আজকে মেয়েটা কাঁদুক আর কোনদিন কাঁদতে দিবনা। কান্নারত অবস্থায় মেয়েদের এত সুন্দর লাগে সেটা এই পাগলিটাকে না দেখলে বুঝতেই পারতামনা।

No comments

Powered by Blogger.